শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৯ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ পুলিশ সম্পর্কে আমাদের অনেকের মধ্যে একটা নেতিবাচক ধারণা কাজ করে। পুলিশের কেউ কেউ হয়তো নীতিবিরোধী কাজ করেন, ফলে তার সব দায় এসে পড়ে সমগ্র পুলিশ বাহিনীর ওপর। তবে পুলিশের সবাই তো খারাপ না। পুলিশ বাহিনীর অনেকে পেশাগত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন তো করেনই, এর পাশাপাশি সামাজিক ও মানবিক দায়িত্বও পালন করে থাকেন। তেমনই একজন পুলিশ কর্মকর্তার নাম এমএম মাহমুদ হাসান।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন এমএম মাহমুদ হাসান। সততা, ন্যায়নিষ্ঠ, কতর্ব্যপরায়নতা, পেশাদারিত্বের কারণে ইতোমধ্যে জেলার সর্বসাধারণ মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। এখন এখানকার মানুষ তাকে আলোকিত মানুষ হিসেবে জানেন। চাকরি জীবনের রুটিন ওর্য়াকের পাশাপাশি তিনি ঝালকাঠির মানুষকে নানা কাজের মাধ্যেমে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম মাহমুদ হাসান
প্রায় প্রতিদিনই তার কার্যালয়ের মীমাংসিত হচ্ছে একাধিক পারিবারিক, জমিজমা সংক্রান্ত বা দীর্ঘ ৪০ বছরের ঝুলে থাকা বিরোধের। ঝালকাঠির মানুষ অনেক ক্ষেত্রে থানায় না গিয়ে এ কর্মকর্তার কাছে ছুটে আসেন সঠিক সমাধানের জন্য। তিনিও চেষ্টা করেন তার মেধা, মনন কিংবা বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করার। এসব ভালো কাজগুলোর স্বীকৃতি স্বরূপ ডিপার্টমেন্ট থেকে তিনি একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন। তার ভালো কাজগুলোর মধ্যে এবারের গল্পটি হচ্ছে মানবতার। তার মানবিক সহযোগিতায় একটি শিশু নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে।
জানা যায়, ঝালকাঠি শহরের কাঠপট্টি পুরাতন কলাবাগান এলাকায় বসবাস করেন ড্রেজার শ্রমিক মো. তাবির হোসেন জোমাদ্দার। ২০১৫ সালে তিনি বিয়ে করেন শাহনাজ আক্তারকে। ২০১৭ সালের ৪ আগস্ট তাদের কোলজুড়ে আসে একটি কন্যা সন্তান। নাম রাখা হয় তামিমা আক্তার। জন্ম থেকেই শিশুটি ‘মেনিংগোসেল’ রোগে আক্রান্ত। তার পিঠে গোলাকৃতির একটি টিউমারের মতো দেখা যায়। এক পর্যায়ে সেটি বড় হতে থাকে। এ রোগে শিশুটির মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানায়।
একমাত্র সন্তানের চিকিৎসার ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না দরিদ্র পরিবারের পক্ষে। জমানো যে টাকা ছিল, তাও চিকিৎসায় ব্যয় হয়ে যায়। এতে অর্থ সংকটে ভুগছিলেন তারা। কোথাও কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে ছুটে যান ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এম এম মাহমুদ হাসানের কাছে। তার কাছে শিশুটির চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেন দরিদ্র বাবা তাবির হোসেন।
অপারেশনের আগে বাবা কোলে শিশু তামিমা
পুলিশ কর্মকর্তা এমএম মাহমুদ হাসান শিশুটির চিকিৎসার জন্য ঢাকার আগারগাঁও শিশু হাসপাতালে তার বন্ধু ডা. দেলোয়ার হোসেন ও ডা. সঞ্চিতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই দুই চিকিৎসক শিশুটিকে ঢাকা নিয়ে যেতে বলেন। নিজের খরচে শিশু তামিমা ও তার পরিবারকে ঢাকায় পাঠান মাহমুদ হাসান। চিকিৎসকরা শিশুটির চিকিৎসা শুরু করেন। চিকিৎসার পুরো দায়িত্ব নেন পুলিশ কর্মকর্তা এম এম মাহমুদ হাসান।
দীর্ঘ দিন চিকিৎসা শেষে শিশুটির বয়স দেড় বছর হলে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর আগারগাঁও শিশু হাসপাতালে অপারেশন করা হয়। ‘মেনিংগোসেল’ রোগ থেকে মুক্তি পায় শিশু তামিমা। নতুন করে জীবন ফিরে পাওয়ায় শিশুটির বাবা মায়ের মুখে হাসি ফুটে উঠে। স্বস্তি ফিরে আসে দরিদ্র এ পরিবারটিতে। বর্তমানে তামিমা পুরোপুরি সুস্থ।
শিশুর বাবা তাবির হোসেন বলেন, আমার মেয়ের জীবন যখন সংকটাপন্ন, তখন আমি মাহমুদ স্যারের কাছে গিয়ে সাহায্য চাই। তিনি আমার মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন। এতে যত টাকা খরচ হয়েছে, তিনি দিয়েছেন। তার কাছে আমরা চিরঋণী! এমন মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা সব জেলাতেই থাকা প্রয়োজন। আমরা সব সময় তার জন্য দোয়া করি!
ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এমএম মাহমুদ হাসান বলেন, ‘মেনিংগোসেল’ রোগটি প্রথমে আমরা বুঝতে পারিনি। আমার ঢাকায় দুই বন্ধু চিকিৎসকের কাছে পাঠানোর পরে তারা রোগটি ধরতে পারেন। শিশুটির চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করে দিতে পেরে আমিও আনন্দিত। আমারও সন্তান রয়েছে। আমি ওই পরিবারের অসহায়ত্বের কথা শুনে নিজেও কষ্ট পেয়েছি। নিজের সন্তানের মতই যত্ন নিয়ে তার চিকিৎসার খরচ বহন করেছি।
Leave a Reply